নেগেটিভ সনদ! নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই করোনার
চুয়াডাঙ্গার জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভারত থেকে আগত এক যাত্রীকে করোনার নমুনা পরীক্ষা না করেই দেওয়া হয়েছে নেগেটিভ সনদ।
সেই করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আবার টাকা নিলেও তার রশিদ দিচ্ছে না চেকপোস্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্টে সব যাত্রীর করোনার র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট বাধ্যতামূলক। প্রতিজনের কাছ থেকে সে অনুযায়ী নেওয়ার কথা ১০০ টাকা। তবে, অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে রশিদ দেওয়া হচ্ছে না, আবার নমুনা না নিয়েও করোনার নেগেটিভ সনদ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। আবার টাকা নিয়েও করা হচ্ছে না নমুনা পরীক্ষা।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারত থেকে দেশে আসেন বাংলাদেশি নাগরিক রেখা রানী সাহা। চেকপোস্টে ঢুকেই স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ স্ক্রিনিং বুথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা ছিল তার। কিন্তু তা করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমি দর্শনা চেকপোস্টে ঢোকার পর আমার নিকট থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হয়। কোনো নমুনা ছাড়াই আমাকে নেগেটিভ রশিদ ধরিয়ে দেন তারা। পরে ওনারা চলে যেতে বললেন।
বাংলাদেশের আসা অপর দুই নারী যাত্রী বলেন, আমাদের দুজনের থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। নমুনাও নিয়েছেন তারা। তবে আমাদের টাকা নেওয়ার রশিদ দেননি তারা।
এদিকে দর্শনা চেকপোস্টের হেলথ স্ক্রিনিং বুথের রেজিস্টার খাতায় দেখা যায়, তালিকায় নমুনা না নেওয়া রেখা রানী সাহার নামই নেই। তাহলে তিনি কিভাবে পেলেন করোনার নেগেটিভ সনদ?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় হেলথ স্ক্রিনিং বুথে দায়িত্বরত কর্মকর্তা দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) জামাত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীদের ভিড়ে তিনি নমুনা না দিয়েই চলে গেছেন। আবার কোনো কোনো সময় ভিড়ের কারণে অনেক সময় রসিদ দেওয়া সফল হয় না আমাদের। আবার দু-একটা মিসও হয়ে থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার, স্কিন হার্ট ডিজিস রোগী এবং ১২ বছরের নিচে যারা আসেন তাদের ইমিগ্রেশনের সুবিধার্থে নেগেটিভ রিপোর্ট দিতে হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
দর্শনা ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই আবদুল আলীম বলেন, দেশত্যাগ বা দেশে ঢোকার সময় অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। ভারতের কোনো যাত্রীর করোনা পজিটিভ হলে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। দেশের কোনো যাত্রীর পজিটিভ হয়ে তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়ে থাকে। তবে দেশত্যাগ বা দেশে ঢোকার সময় করোনা নেগেটিভ সনদ থাকতেই হবে। এখানে কোনো দুর্নীতির সুযোগ নেই। আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। তবে টাকার বিনিময়ে করোনার সনদ এবং টাকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষা না করেই নেগেটিভ সনদ দেওয়া এটা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হেনা জামাল শুভ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, ভারতে আসা-যাওয়া প্রত্যেক যাত্রীর করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। যদি এর বাইরে এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।